আমাদের দেশে শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। সেটি কমবেশি সবারই জানা। এমন একসময় ছিল যখন শিক্ষকরা তেমন কিছুই পেতেন না। তখন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক চাহিদাও কম ছিল।
সারা দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে ছিল। অত্যাবশ্যকীয় ব্যয়ের খাত ও পরিমাণ অনেক কম ছিল। আগে শিক্ষকরা শিক্ষা দিতেন নিজস্ব কৌশলে নিজের জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করে।
গুরুর গুণেই তৈরি হতো গুণী শিষ্য। গুরু উত্তম হলেই শিষ্য উত্তম হতেন। গুরুর সেই কাজটি ছিল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও স্বাধীন। তাই ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ছিল না। শিক্ষার্থীরাও স্বেচ্ছায় যেতেন গুরুর কাছে। তাই তারাও ফাঁকি দিতেন না। স্বেচ্ছায় মেনে নিতেন গুরুর শাসন-বারণ অথবা ছেড়ে দিতেন গুরুর সান্নিধ্য। গুরুকে শাসন করার বা উপদেশ দেওয়ার কেউ ছিল না। স্ব-শাসিত ছিলেন গুরু।
নিজের দায়িত্ব-কর্তব্যবোধে জাগ্রত হয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পূর্ণ সময়, শ্রম ও মেধা নিয়োজিত করতেন শিক্ষকতায়। গুরুর সংসারের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব নিত তার যৌথ পরিবার ও স্বজন। সাধারণত সচ্ছল পরিবারের জ্ঞানী ব্যক্তিরাই নিয়োজিত হতেন শিক্ষাদান কাজে। তাই শুধু অর্থ উপার্জন বা জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে শিক্ষকতা করতে বাধ্য হতেন। শিষ্যদের কাছ থেকে সম্মান ও সামান্য উপহার পেলেই নিজেকে সফল ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করতেন তিনি। তখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের সংখ্যাই তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল। কোনো কোনো পরিবারের ৮-১০ জন সন্তানের দুয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষা নিতেন। অধিকাংশ পরিবারের ছেলেমেয়েরাই পারিবারিক পেশায় নিয়োজিত থাকতেন বিধায় গুরুর কাছে যেতেন না। গেলেও টিকে থাকতেন খুবই কমসংখ্যক।
উৎপাদন কৌশল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে উৎপাদিত পণ্যের ধরন, মানুষের কর্মের ধরন, চাহিদার ধরন ও জীবনযাত্রার মান। তাই পরিবর্তিত পণ্য-সেবা উৎপাদনের জন্য যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়েছে শিক্ষার বিষয় ও পাঠদান কৌশল। ক্রমাগত শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। একটি বিশেষ পেশায় পরিণত হয়েছে শিক্ষকতা। কিন্তু এই বিশেষ পেশাকে উন্নত পেশায় পরিণত করায় মনোযোগ দিইনি আমরা। নিইনি শ্রেষ্ঠ মানুষ তৈরির জন্য কোনো বাস্তব পদক্ষেপ।